। ভৌগলিক অবস্থা:
উপজেলা মোট আয়তন ২১৪.৪০বর্গকিলোমিটার। ভৌগলিকভাবে বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় জেলা কিশোরগঞ্জের মাঝামাঝি স্থানে চব্বিশ ডিগ্রী বিশ মিনিট, চব্বিশ ডিগ্রী ত্রিশ মিনিট উত্তর অক্ষাংশ ও নব্বই ডিগ্রী পঞ্চাশ মিনিট, একান্নব্বই ডিগ্রী পনের মিনিট, পূর্ব দ্রাঘিমাংশ এর মাঝে অবস্থিত। মোট জনসংখ্যা 1,31.757 জন। পুরুষ: 63,973 জন,মহিলা: 63,575 জন। সীমানা নিকলী উপজেলার উত্তরে করিমগঞ্জ উপজেলা, দক্ষিণে বাজিতপুর উপজেলা, পূর্বে মিঠামইন উপজেলা ও পশ্চিমে কটিয়াদী উপজেলার অবস্থান রয়েছে।
৩। নামকরণ:
মোগল বাহিনী খাজা ওসমানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে এবং তাকে ধাবিত করতে এই এলাকায় এসে
পৌঁছায় এবং সেখানে ছাউনি ফেলে। তাদের অস্থায়ী আবাসস্থল স্থানীয় মানুষেরা জড়ো হলে দলের প্রধান সিপাহীদের বলেন উছলে নিকালো। এই ফার্সিয় শব্দ ভাষা উচ্চারনের বিবর্তন আর বিকৃতীতে নিকালো থেকে নিকলী হয়েছে বলে জনশ্রুতি হয়েছে। অন্যদিকে, নিকলীর সাবেক নাম আগর সুন্দর বলে নানা গ্রন্থে উল্লেখ হয়েছে। এদিকে নিকলী নিখলী নামের হুবহু শ্ব্দ উচ্চারণ ব্যবহার উল্লেখ রয়েছে বাংলা ভাষার প্রথম প্রাচীন চর্যাপদ নামক কাব্য গ্রন্থে। অনুরূপ প্রাচীন রসুল বিজয় কাব্য গ্রন্থে নিকলী›নিকলী›নিখলী শব্দ ব্যবহার উল্লেখ রয়েছে। অর্থাত জনপদ নামে নিকলী নামের সঠিক উতপত্তির কোন সন্ধান না পাওয়া গেলেও নিকলী এ শব্দ নামে দালিলি প্রমাণ পাওয়া যায়।
স্থানীয় ইতিহাস:
নিকলী কিশোরগঞ্জ জেলায় প্রাচীন জনপদ। ব্রিটিশ ভারতের বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলার প্রথম প্রকাশিত এবং 1783 খ্রিস্টাব্দে অংকিত ঐতিহাসিক মেজর জেমস রেনেল এর মানচিত্রে নিকলী জনপদের কথা উল্লেখ আছে। 1787 খ্রিস্টাব্দে মোট 39টি পরগনা নিয়ে যখন ময়মনসিংহ জেলা গঠিত হয় তখন নিকলী ছিল সেই বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলার একটি উল্লেখযোগ্য পরগনার নাম। সে সময়ে সেই মানচিত্রের কিশোরঞ্জ নামে কোন গঞ্জ/থানা মহকুমা নামের কোনো উল্লেখ নেই। জেমস রেনেলের মানচিত্রে নিকলী পরগনার আরো যে সব স্থানের নাম উল্লেখ পাওয়া যায় তা হলো নিকলী/দামপাড়া/সিংপুর/কুরশা/গুরই/ডুবি ও মিঠামইন থানা হিসেবে এর প্রতিষ্ঠাকাল 15 আগস্ট 1823 খ্রিস্টাব্দ। অর্থা তখন কিশোরগঞ্জ নামে কোন জনপদের বা থানা অথবা মহকুমা নামকরণ সৃষ্টি হয়নি। সে সময়ে বর্তমান জেলার ভৌগলিক সীমানার মধ্যে থানার সংখ্যা ছিল মাত্র 2টি। একটি নিকলী অন্যটি বাজিতপুর। আর বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলার মধ্যে থানার সংখ্যা ছিল মাত্র 12টি। এক কথায় 1823 খ্রিস্টাব্দে নিকলী থানা প্রতিষ্ঠার প্রায় 37 বছর পর কিশোরগঞ্জ নামে মহকুমার সৃষ্টি হয়েছে একই সঙ্গে থানা। থানা সৃষ্টির ইতিহাসে নিকলী বর্তমানে কিশোরগঞ্জ জেলার একটি প্রথম প্রাচীন থানার নাম। নিকলী পরগনা প্রাচীন থানা বর্তমান উপজেলার ভূমি রাজস্বে দ’টি অংশে বিভক্ত। একটি তপে নিকলী অন্যটি জোয়ার নিকলী নামে পরিচিত।1860 খ্রিস্টাব্দে কিশোরগঞ্জ নামে মহকুমার সৃষ্টি হয়। এর অধীনে থানার সংখ্যা ছিল মাত্র 3টি। যথা: নিকলী, বাজিতপুর ও কিশোরগঞ্জ। কিশোরগঞ্জ থানা প্রতিষ্ঠিত তারিখ উল্লেক নেই। ধারনা করা হয় একই তারিখে থানা ও মহকুমা নামের সৃষ্টি হয়েছিল। তারও বহু আগে অথ্যাৎকিশোরগঞ্জ মহকুমা সৃষ্টির প্রায় 15বছর পূর্বে নিকলী থানাকে 1845 খ্রিস্টাব্দে মহকুমা স্থাপনের জন্য একটি সরকারী প্রস্তাব ও রিপোর্ট পেশ করা হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে কি কারণে বাস্তবায়িত হয়নি তা জানা যায়নি। জেলা গেজেটিয়ারে এ তথ্য উল্লেখ আছে।
1880 খ্রিস্টাব্দে নিকলী থানা সদরে একটি মুন্সেফী আদালত ছিল।এটি পরবর্তীকালে হোসেনপুর থানার স্থানান্তরিত হয়। 1891 খ্রিস্টাব্দে হোসেনপুরের আদালতটি পুনরায় স্থানান্তরিত করে কিশোরগঞ্জ মহকুমা সদরে পুনস্থাপন করা হয়। 1880 খ্রিস্টাব্দে নিকলী থানা সদরে পোস্ট অফিস স্থাপিত হয়। অন্যদিকে, 1896 খ্রিস্টাব্দে নিকলী থানার পুলিশ ফাঁড়ি স্থানান্তরিত করে কটিয়াদীতে নিয়ে আসা হয়। প্রকাশ থাকে যে, কটিয়াদী সময়ে নিকলী থানার অন্তভূক্ত ছিল। অতপর: নিকলীতে পুনরায় থানা স্থাপিত হয় 1917 খ্রিস্টাব্দে। 1907 খ্রিস্টাব্দে নিকলী সদর পোস্ট অফিসে প্রাচীন টেলিগ্রাফ পদ্ধতি ও পরবর্তীকালে টেলিফোন চালু করা হয়। 1850 খ্রিস্টাব্দে নিকলী থানার প্রথম আদম শুমারীর লোক গণনার কাজ শুরু হয়। 1868 খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত জেলা গেজেটিয়ার নিকলী পরগনার বিভিন্ন জনপদের বিভিন্ন ধর্মগোত্র বর্নের জনগোষ্ঠীর লোক সংখ্যা পরগনার লোক আছে। নিকলী সদরে সর্বপ্রথম বেসরকারী পর্যায়ে ভারত চন্দ্র সাহা ডিসপেনসারী নামে একটি স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠান চালু হয়। বর্তমানে সরকারী পর্যায়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমম্পেক্স নামে একটি হাসপাতাল চালু রয়েছে।
4। ইউনিয়নসমূহের নাম: ১। নিকলী ২। দামপাড়া ৩। কারপাশা ৪। সিংপুর ৫। জারইতলা ৬। গুরই ৭। ছাতিরচর ইউনিয়ন।
৫। হাওড় সমৃদ্ধ কিশোরগঞ্জ জেলার কেন্দ্রস্থলে নিকলী উপজেলার অবস্থান। নিকলী থেকেই মূলত: হাওড়াঞ্চল শুরু হয়েছে। সে হিসেবে নিকলীকে হাওড়ের প্রবেশপথ বলা যায়। প্রবেশপথেই একেবারে হাওড়ের কুল ঘেঁসে নিকলী উপজেলা পরিষদের অবস্থান। এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দয এক কথায় অপরূপ। যা নিজের চোখে না দেখলে শুধু অনুমান করা যায় না। এখানে রয়েছে দিগন্ত বিস্তৃত ফসলের মাঠ। মাইলের পর মাইল
শুধুই সবুজ ফসলের মাঠ। আর সে সবুজ মাঠ বৈশাখে সোনালী বরণ ধারণ করে। ফসল তোলার পর যখন মাঠ বর্ষার পানিতে তলিয়ে যায় সে দৃশ্যটি আরো মনোমুগ্ধকর। তখন চারিদিকে শুধুই পানি আর পানি। নিকলী উপজেলা পরিষদের সামনে দাড়িয়ে পূর্বদিকে যতদূর দৃষ্টি যায় ততদূর পযন্ত অথৈ পানি। এ যেন কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতেরেই আরেকটি সংস্করণ। হাওড়ের বিশাল ঢউ এসে আছড়ে পড়ে প্রায় 5কিমি: দীর্ঘ নিকলী উপজেলা সদর প্রতিরক্ষণ দেয়ালে। প্রকৃতি এখানে তার অপরূপ সৌন্দয মেলে ধরেছে।
নৌকা বাইচ নিকলী উপজেলা একটি বার্ষিক ইতিহ্যবাহী বিনোদন। লক্ষ লক্ষ লোক বর্ষকালীন নৌকা বাইচ দেখা এবং প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য অপক্ষেমান থাকে। জাতীয়ভাবে সাতার প্রতিযোগিতা এবং সাতর তৈরীতেও নিকলীর ইতিহ্য অনেকদিনের। অতি সাধারণ জীবন যাপনে তুষ্ট সরল মনের মানুষ এবং দলমত নির্বিশেষে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিকলীর সবচেয়ে বড় ঐতিহ্য।
৬। জনপদ ও সমাজ সংস্কৃতি:
মানব বসতির সূচনা লগ্ন থেকেই এখানে বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠরি সংমিশ্রনে এক অভিন্ন সমাজ ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। এককালে প্রাচীন কোন জনগোষ্ঠীর কোচ, গারো, হাজং প্রভৃতি জাতি গোষ্ঠীর মানুষ বসবাস করতো। এমনকি এক সময় ব্যপকভাবে ভাগ্যান্বষী মানুষের আগমন ঘটেছিল এখানে। তাদের ভাষা সংস্কৃতিকে এখানকার আজকের উন্নত আধুনিক সমাজ সংস্কৃতি। বর্তমানে হিন্দু মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ই অদ্যবধি পাশাপাশি পাড়া, গাঁ গ্রাম, বসতি স্থাপন করে অবস্থানের মাধ্যমে পারস্পরিক সুখ-দু:খ সৌহার্দ ও সম্প্রীতি বজায় রেখে সমাজ কাঠামো ও সমাজ বিন্যাস বজায় রেখেছে। নৃতাত্বিক গবেষণায় বর্তমানে হিন্দু জেলে, কৈবত, দাস,বর্মণ কামার, কুমার পাল, ধুপ, শীল সাহা, নম, নমশুদ্র, চাড়াল, চন্ডাল, চামার, সূত্রধর, বণিক ইত্যাদি ছাড়াও মুসলিম খানদানি খন্দকার, ভূইয়া, খান, পাঠান, সৈয়দ, কারার, শেখ, মিয়া, বেপারী, প্রধানী ইত্যাদি পারিবারিক পদবীযুক্ত সামাজিক শ্রেণী সম্প্রদায় বসবাস করেন। হিন্দু মুসলিম উভয় শ্রেণীর ব্রিটিশ আমলে নামের পূর্বে শ্রী/শ্রীশ্রী/শ্রীযুক্ত ব্যবহার করার রীতি ছিল। এমনকি হিন্দু বাবুরাও নামের পুর্বে মুন্সী পদবী ব্যবহার করতেন। বর্তমান যুগে এ প্রথার প্রচলন নেই। তবে হিন্দু সম্প্রদায়ে নামের পূর্বে শ্রী/শ্রীশ্রী/শ্রীযুক্ত ব্যবহার করলেও মুসলমানরা নামের পূর্বে মুহাম্মদ, মোহাম্মদ, মো:, মু-শব্দ ব্যবহার করে থাকেন। বর্তমানে এখানে আধিবাসী নেই। এককালে ছিল এর বড় প্রমাণ এখানে মোহরকোনা একটি জনপদের নাম রয়েছে সাওতলভিটা। অপর আরো কয়েকটি স্থানের নাম করণ রয়েছে বৈদ্যার কান্দা, কোচের ভিটা, দাসের, সিংপুর ইত্যাদি।
ভাষা ও সাহিত্য:
এখানকার আঞ্চলিক কথ্য বা লোকভাষা মৈমনসিংহ গীতিকার প্রচলিত ভাষাবলে পরিচিত। এভাষা বাংলা আঞ্চলিক লোকসাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছে। রচনা করেছে মহ মূল্যবান লোক সাহিত্যের ইতিহাস গ্রস্থ। ফোকলোর বা লোকসাহিত্য কিংবা লোক-সংস্কৃতিকে স্থানীয় বিশেষ বিষয়গুলো দ্বারা বিভিন্ন শ্রেনীতে বিভক্ত করা যায়। যেমন: লোকগান, লোককিসসা, মেয়েলীগীত বা গান, লোকছড়া, লোকধাঁধাঁ, লোক প্রবাদ, লোকপ্রবচন, লোকবিশ্বাস, লোকসংস্কার, লোপক-কু-সংস্কার, কিংবদন্তী, তন্ত্র,মন্ত্র, পালাগান, কবিগান,ঘাটুগান, নৌকা বাইচের গান, সারিগান ইত্যাদি। ফোকলোর হলো পৌরানিক লোককাহীনি। গ্রাম বাংলার পল্লী লোকসমাজ তাদের মনের ভাব প্রকাশ যে সাহিত্য সৃষ্টি করে তাকেই লোকসাহিত্য বলে।এপ্রসঙ্গে মৈমনসিংহ গীতিকার কথা উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়। লোকসাহিত্য জনপ্রিয়তা ভাটি কিশোরগঞ্জ নিকলী উপজেলা হাওড় জনপদে আজও বিরাট বিশাল অবস্থান রয়েছে। এ নিকলী অঞ্চল থেকেই সংগ্রহ করা হয়েছিল মাধবী মালঞ্চ কইন্যা নামের একটি প্রাচীন পালাকাব্য। এ অঞ্চলের সাহপুর নামক গ্রাম থেকেই সংগ্রহ করা হয়েছিল পৈলন খা নামক প্রাচীন পালাকাব্য। এ দু’টি পালাকাব্য বর্তমানে বাংলা একাডেমি সংগ্রহশালার গ্রন্থাগারে আজও সংরক্ষিত আছে।
প্রবাদ প্রবচন ধাঁধাঁ ছড়া কল্প কাহিনী কিসসা শিলুক রূপকথা লোককথা লোকবিশ্বাস লোকউৎস কিংবদন্তী ইত্যাদি লোকসাহিত্যের অন্তভূক্ত। বাংলার লোকজীবন থাকলে তার লোক-সংস্কৃতিও থাকবে। এগুলো যুগ যুগ ধরে এ অঞ্চলের মানুষ পালন করে লালন করে ও গ্রহণ করে। একটি দেশের একটি অঞ্চলের একটি জেলার উপজেলার মৌলিকতা ও স্বকীয়তার পরিচয় তার লোক-সংস্কৃতি দ্বারাই সম্ভব। বাংলার আঞ্চলিক সংস্কৃতি বর্তমানে তিন প্রকার। যথা: ১। নগর-সংস্কৃতি ২। লোক-সংস্কৃতি ৩। আদিম সংস্কৃতি। এ উপজেলার লোক-সংস্কৃতির প্রভাব বিস্তার বেশী। গ্রামীণ তন্ত্র-ঝাড়, যাদু, ঝাড়, ফু, বশীকরণ, কবজ, তাবিজ, জ্বীন, পরীর চিকিৎসা, পীর-ফকির, পদ্ধতি ইত্যাদি লোক-সংস্কৃতির বিশেষ বিভাগ। যা কিছুকাল আগে পযন্ত পল্লীর এরূপই ছিল।
৭। মুক্তিযোদ্ধাদের নামের তালিকা:পরিশিষ্ট ক মোতাবেক ।
৮। নিকলী’র দর্শনীয় স্থানসমূহ:
হাওড়ের একেবারে কূল ঘেষে নিকলী উপজেলা পরিষদের অবস্থান। নিকলী কিশোরগঞ্জ সড়কের কুর্শা হতে নিকলী উপজেলা পরিষদ হয়ে বেড়ীবাঁধ পযন্ত দীঘ প্রতিরক্ষা দেয়ালে বর্যায় বিশাল সব ঢউয়ের আছড়ে পড়ায় দৃশ্যটি সত্যিই মনোমুগ্ধকর। চাঁদনী রাতে বেড়ীবাঁধের বেঞ্চে বসে আপনি সম্পূর্ণ নিরাপদে রাতের হাওড় অবলোকন করতে পারেন। এখানে দাঁড়িয়ে যতদূর দৃষ্টি যায় শুধুই পানি। এখানকার সবচেয়ে
আকর্ষনীয় দৃশ্য ভোরের সূযোদয়। দিগন্ত বিস্তৃত জলরাশি ভেদ করে ভোরের সূযোদয়ের দৃশ্যটি যেন কক্সবাজার বা কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতেরই প্রতিরূপ যা নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বস করা যাবেনা।
১)গুরই শাহী মসজিদ: উপজেলা সদরের সোজা দক্ষিণ দিকে অবস্থিত গুরই ইউনিয়নে অতি প্রাচীন এ মসজিদটি অবস্থিত। স্থাপত্যশৈলীর বিচারে অতি প্রাচীর এ মসজিদটি একটি প্রত্মতাত্ত্বিক নিদর্শন, এতে কোন সন্দেহ নেই। মসজিদটির দেয়ালগাত্রে স্থাপিত শিলালিপিটির পাঠোদ্ধার করা গেলে এর ইতিহাস জানা যেতেও পারে। এ মসজিদকে ঘিরে এতদঞ্চলে অনেক কথা প্রচলিত রয়েছে। যেমন অনেকেই বলেন, এটি নাকি গায়েবী মসজিদ। এখনও অনেক মায়েরা তাদের শিশু সন্তানদের মুখে প্রথম ভাত দেয়ার সময় স্বপরিবারে গুরই শাহী মসজিদে যান।
২) হাজী সাহেবের দরগা: নিকলী সদর ইউনিয়নের পূর্বগ্রামের দরগাহাটিতে মহান ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব হাজী সাহেবের মাজার (দরগা)শরীফ অবস্থিত। মাজার সংলগ্ন মসজিদ এবং পাশেই দরগাবাড়ী কবরস্থান। এ
খানে প্রতিবছরই ওরছ অনুষ্ঠিত হয়।
৩) পাহাড় খাঁর ভিটা: নিকলী উপজেলা সদরের ঠিক উত্তরদিকে মজলিশপুর গ্রামের পশ্চিমে হাওড়ের মাঝে দ্বীপ সদৃশ গোলাকৃতির এ ভিটাতে সাধক পুরুষ পাহাড় খাঁর মাজার রয়েছে। বর্যার দ্বীপ সদৃশ এ ভিটাকে হাওড়ের পানিতে ভাসমান কোন বস্তু মনে হতে পারে। পাহাড় খাঁর শিষ্য আনু পাগলার সামধিও এ ভিটাতেই। এলাকায় এবং এলাকার বাহিরে তাঁদের অনেক ভক্তবৃন্দ রয়েছ। প্রতি বছর বর্যার শুরুতে শিষ্যের ওরছ ভক্তবৃন্দের সমাগম হয় এ ভিটাতে।
৪) হযরত শাহ গুণ জালাল (র:)এর মাজার: দামপাড়া ইউনিয়নের উত্তর দামপাড়ায় সাহেবের হাটিতে 360 আউলিয়ার একজন হযরত শাহ জালাল (র:)এর মাজার অবস্থিত। বাৎসরিক ওরছে অনেক বরেণ্য ওলামায়ে কেরাম এ মাজারে জিয়ারতে আসেন। এলাকায় খুবই সম্মানীয় এ মাজার শরীফ।
৫) ছেত্রা গ্রামের আখড়া:গুরই ইউনিয়নের নিভৃত গ্রাম ছেত্রা।এ গ্রামেই রয়েছে বহু পুরাতন স্থাপত্য নিদর্শন বৈষব ধর্মাবলম্বীদের তীর্থস্থান ছেত্রা আখড়া। প্রায় জঙ্গলাকীর্ণ এ আখড়াটি ভ্রমন পিপাসদের আকৃষ্ট করবেই।
৬) ষাইটধার লাল গোস্বমীর আখড়া:উপজেলা পরিষদের উত্তর-পশ্চিম কোনে সদর ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামে এ আখড়াটি অবস্থিত। অতি প্রাচীন এ আখড়ার কারুকাযময় সুউচ্চ মঠ, ভাঙ্গা প্রাচীর, পাকাঘাট এখনও কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু সন্নাসী এখনও এ আখড়ায় অবস্থান করেন।
৭) চন্দ্রনাথ গোস্বামীর আখড়া:নিকলী সদর ইউনিয়নের মোহরকোনা ভাটিপাড়ায় সাধক চন্দ্রনাথ গোস্বামীর আখড়াটি অবস্থিত। এ আখড়া ঘিরে এ অঞ্চলে অনেক কিংবদন্তী রয়েছে। প্রচলিত আছে-একদা মনষা দেবী মানবরূপ ধারণ করে এ আখড়ায় আর্বির্ভূত হয়েছিলেন এবং তাঁর রূপে মুগ্ধ হয়ে অনেকেই তাঁকে বিবাহের প্রস্তাব দেন। এ সমস্যা সমাধানকল্পে দেবী নৌকা বাইচের আয়োজন করতে বলেন এবংযে নৌকা সবার আগে আখড়ার ঘাটে এসে ভিড়বে, সে নৌকার মাঝিকেই তিনি বিয়ে করবেন কথিত আছে, এভাবেই নিকলী’র ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচের শুরু।
৯।নিকলীর বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব:জনাব মো:আ: হামিদ স্যার (শিক্ষাবিদ), শ্রীপতি ঠাকুর, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিবিদ, রমনী প্রশাদ-ঐ, আছির উদ্দিন কারার, ঐ, ডা: শৈলেশ দেবনাথ, ঐ, আফতার উদ্দিন কারার, (সাবেক এম,এন,এ ও সমাজ সেবক), আমির উদ্দিন আহমেদ (সাবেক এমপি ও সমাজ সেবক) বাবু দয়াল সাহা, শিক্ষানুরাগী, কারার মাহমুদুল হাসান, (সাবেক সচিব), মতিয়ার মহমান বীর বিক্রম, করার মিজানুর রহমান (আন্তর্জাতিক মানের সতারু এবং সাফ গেমস এ স্বর্ণপদক জয়ী।
১০। হাওড়ে মাছ ধরা: এখানকার লোকজনকে ছোট ছোট ডিঙ্গি নৌকায় প্রচন্ড ঢউয়ের মধ্যেও হাওড়ে মাছ ধরতে দেখলে ভয় পাবেননা। এটি এখানকার নিত্যনৈমিত্তিক দৃশ্য। ইচ্চে হলে আপনিও বড়শী দিয়ে মাছ ধরতে পারেন। একটু সাহস করলে ডিঙ্গি নৌকায় বসেও মাছ ধরতে পারেন।
১০। বিনোদনঃ
২)সাঁতার কাঁটাঃ সাঁতার জানেনা এমন লোকের দেখা পাওয়া নিকলীতে বিরল ঘটনা । দেখেবন ,ছোট ছোট বাচ্চারা দল বেধে ঝাঁপ দিয়ে পানিতে পড়ছে । হাটু বা বুক পানিতে বাচ্চাদের ঝাপাঝাপি দেখেত বেশ লাগে। হঠাত দেখলে কেই ভয় পেতে পারেন। তবে ভয়ের কিছু নেই । আপননি ও সাতার কাটতে পারেন,না জানলে লাইফ জ্যাকেট নিয়ে নেমে পড়ুন পানিতে । একটু সাঁতরে নিন হাওড়ের পানিতে । রোমাঞ্চকর লাগবে।
৩)নৌকা ভ্রমণঃ নিকলী আসবেন অথচ নৌকায় করে হাওড়ে বেড়াতে বেরোবেন না, এটা হতেই পারে না । ইঞ্জিন চালিত নৌকায় অথবা স্পীডবোটে করে বেড়ানোর মজাই আলাদা । নিকলীর দর্শনীয় সব স্থানেই আপনি নৌকায় করে যেতে পারেন।
১১। প্রাকৃতিক সম্পদঃ কালো মাটি ( যা জ্বালানী হিসেবে ব্যবহৃত ) জলমহালের মধ্যে মাছের বৈচিত্র ফসলের প্রাচুর্যতা নিকলীর প্রাকৃতিক সম্পদগুলোর মধ্যে অন্যতম।
১২। নদ -নদীর নামঃ নদীসমূহের মধ্যে নরসুন্দা , সোয়াইজনী, ঘোড়াউত্রা, ধনু নদী উল্লেখযোগ্য । নরসুন্দা নদী সোয়াইজনী নদীর সাথে মিলিত হয়েছে। ধনু নদী ঘোড়াউত্রা নদীর সাথে মিলিত হয়েছে।
১৩। ব্যবসা-বাণিজ্যঃ এক সময় নিকলী পাটের গুদাম এ পাঠ প্রক্রিয়াজাত ব্যবসার জন্য বিখ্যাত ছিল।
১৪। হোটেল ও আবাসনঃ
০১) সরকারী ডাকবাংলোঃ উপজেলা পরিষদ অভ্যন্তরে মনোরম পরিবেশে রাত্রি যাপনের ব্যবস্থা রয়েছে এখান কার ডাকবাংলোতে। অআধুনিক স্থাপত্যৌশলীতে গড়া এ ডাকবংলোরয় রাত্রিযাপন আপনাকে আনন্দ দেবে। সরকারী ডাকবাংলোর নিজস্ব কুক রয়েছে্ আপনার রুচিসম্মত পছন্দের সব খাবার সে আপনাকে রান্না করে খাওয়াবে। এ ছাড়া জেলা পরিষদের ডাকবাংলোতে ও আবাসনের ব্যবস্থা রয়েছে।
০২) হোটেল শাহজাহান ( আবাসিক ): নিকলী পুরান বাজারে নদী তীরে বেসরকারী ব্যবস্থাপনায় হোটেল শাহজাহান অবস্তিত । বেশ পরিচ্ছন্ন এ আবাসিক হোটেলেও আপনি নির্বিঘ্নে রাত্রি যাপন করতে পারেন।
১৫। যোগাযোগ ব্যবস্থাঃ কিশোরগঞ্জ জেলা সদর হতে নিকলী উপজেলার দূরত্ব ২৬ কিলোমিটার। নিকলী উপজেলা কিশোরগঞ্জ জেলার মানচিত্রের দক্ষিণ-পূর্ব দিকের ঠিক মাঝামাঝি স্থানে অবিস্থত। বর্তমানে সড়ক পথে নিকলী থেকে সারা বছরই জেলা সদরে যাতায়াত করা যায় । ফলে নিকলী থেকে রাজধানী ঢাকা, বাণিজ্যনগরী চট্টগ্রাম, সীমান্তবর্তী অঞ্চল সিলেট, সাবেক বৃহত্তর জেলা ময়মনিসংহ সহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল সমূহে বাস চলাচলে সড়ক পথে উন্নয়ন সাধিত হয়েছে । বর্তমানে নিকলী থেকে রাজধানী ঢাকা ও চট্টগ্রামে প্রতিদিন সকাল -সন্ধ্যা বাস চলাচল করে, তবে ব্যবসা বাণিজ্যের ক্ষেত্রে এখন ও এ অঞ্চলে সড়ক পথ থেকে নদী পথ অত্যন্ত উন্নত এবং অন্যতম। নিকলী থেকে প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যা ভৈরবের সাথে নদী হতে মালবাহী ও যাত্রীবাহী নৌকা ও লঞ্চ নিয়মিত চলাচল করে। নিকলী সদর ও পুড্ডা বাজারে মোট দু টি বাসস্ট্যান্ড রয়েছে । ঢাকা থেকে ভৈরব ভায়া কটিয়াদী রোডে পুলেরঘাট হয়ে নিকলী উপেজলার দূরত্ব ভৈরব উপজেলা হতে ৫৮ কিলোমিটার । ঢাকা হতে সড়ক পথে যেমন তিন ঘণ্টায় বাসে চড়ে আসা যাওয়া যায় ,তেমনি রেল লাইনে হচিহাটা রেল স্টেশন থেকে সহজেই নিকলীর সাথে ঐ তিন ঘণ্টায় ঢাকা থেকে অনায়াসে আসা যাওয়া করা যায় । নিকলী উপজেলায় কোন রেল লাইন না থাকায় ঢাকা টু কিশোরগঞ্জ পথে আন্তনগর এগারসিন্দুর সার্ভিসের মাধ্যমে ভৈরব থেকে কিশোরগঞ্জ জেলার পথে বাজিতপুর, সরারচর, মানিকখালী অখবা হচিহাটা রেল স্টেশনের মাধ্যমে নিকলী উপজেলার সদরের সাথে সড়ক পথে যোগাযোগ রয়েছে । অপরদিকে নদীপথে নিকলী চন্ডিখালী লঞ্চ ঘাট থেকে দক্ষিণে ভৈরব অআর উত্তর দিক ইটনা সাচনা পর্যন্ত যাত্রীবাহী লঞ্চ ও মালবাহী কার্গো নৌকা চলাচল করে থাকে। কাচা সড়কঃ ২০০ কিঃমিঃ ,আধা পাকা ১৫ কিঃমিঃ ,পাকা সড়ক ২২ কিঃমিঃ, ব্রীজ সংখ্যা ১৫ টি। এ উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্থায় আজ ও কথায় আছে- বর্ষায় নাও, আর হেমন্তে শীত মৌসুমে পাও হলো ভরসা। এ ছাড়া ও গুদারা নৌকা আর সেই ডিংগি নৌকা ,রিকসা, ইঞ্জিন চালিত নৌকা ট্রলার ,স্থানীয় উদলা নৌকা, ঠেলা গাড়ি,ভ্যান ছাড়াও ইঞ্জিন চালিত ভটভট টেম্পু, বাস ইত্যাদি বর্তমানে চলাচল করে। কৃষি কাজের বলদ ষাড় দিয়ে এখন ও গরুর গাড়ি ,মহিষের গাড়ি চলাচলের প্রচলন রয়েছে। সনাতন যানবাহন হিসেবে সেই পালকি, মাফা , ঘোড়ার গাড়ি ,গয়না, পানসি ইত্যাদির প্রচলন এখন বিলুপ্ত ।
১৬। পত্র পত্রিকাঃ নিকলী থেকে স্থানীয়ভাবে প্রকাশিত কোন পত্র পত্রিকা নেই। তবে পার্শ্ববর্তী উপজেলা এবং বেশ কয়েকটি জেলার নিজস্ব প্রকাশনার নিকলী উপজেলার খোজ খবর এবং তাদের প্রতিনিধিদের এ উপজেলার নিয়মিত যাতায়াত রয়েছে । এ ছাড়া বেশ কয়েক টি জাতীয় দৈনিক পত্রিকার প্রতিনিধিরা নিকলীর তথ্যাদি তুলে ধরেন ।
১৭। হাট বাজারঃ নিকলী নতুন বাজার, নিকলী পুরান বাজার, দামপাডা বাজার, সিংপুর বাজার, রোদারপুডডা বাজার, জারইতলা বাজার, আঠারবাডিযা গোপীরাযের বাজার, মজলিশপুর বাজার, আছানপুর বাজার, বড.কান্দা বাজার ।
১৮। জাতীয. সংসদ সদস্যের নামঃ হালহাজ্ব মোঃ আফজাল হোসেন
১৯। মানচিত্রে নিকলী উপজেলাঃ পরিশিষ্ট খ মোতাবেক ।
Planning and Implementation: Cabinet Division, A2I, BCC, DoICT and BASIS