স্থানীয় ইতিহাস:
নিকলী কিশোরগঞ্জ জেলায় প্রাচীন জনপদ। ব্রিটিশ ভারতের বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলার প্রথম প্রকাশিত এবং 1783 খ্রিস্টাব্দে অংকিত ঐতিহাসিক মেজর জেমস রেনেল এর মানচিত্রে নিকলী জনপদের কথা উল্লেখ আছে। 1787 খ্রিস্টাব্দে মোট 39টি পরগনা নিয়ে যখন ময়মনসিংহ জেলা গঠিত হয় তখন নিকলী ছিল সেই বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলার একটি উল্লেখযোগ্য পরগনার নাম। সে সময়ে সেই মানচিত্রের কিশোরঞ্জ নামে কোন গঞ্জ/থানা মহকুমা নামের কোনো উল্লেখ নেই। জেমস রেনেলের মানচিত্রে নিকলী পরগনার আরো যে সব স্থানের নাম উল্লেখ পাওয়া যায় তা হলো নিকলী/দামপাড়া/সিংপুর/কুরশা/গুরই/ডুবি ও মিঠামইন থানা হিসেবে এর প্রতিষ্ঠাকাল 15 আগস্ট 1823 খ্রিস্টাব্দ। অর্থা তখন কিশোরগঞ্জ নামে কোন জনপদের বা থানা অথবা মহকুমা নামকরণ সৃষ্টি হয়নি। সে সময়ে বর্তমান জেলার ভৌগলিক সীমানার মধ্যে থানার সংখ্যা ছিল মাত্র 2টি। একটি নিকলী অন্যটি বাজিতপুর। আর বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলার মধ্যে থানার সংখ্যা ছিল মাত্র 12টি। এক কথায় 1823 খ্রিস্টাব্দে নিকলী থানা প্রতিষ্ঠার প্রায় 37 বছর পর কিশোরগঞ্জ নামে মহকুমার সৃষ্টি হয়েছে একই সঙ্গে থানা। থানা সৃষ্টির ইতিহাসে নিকলী বর্তমানে কিশোরগঞ্জ জেলার একটি প্রথম প্রাচীন থানার নাম। নিকলী পরগনা প্রাচীন থানা বর্তমান উপজেলার ভূমি রাজস্বে দ’টি অংশে বিভক্ত। একটি তপে নিকলী অন্যটি জোয়ার নিকলী নামে পরিচিত।1860 খ্রিস্টাব্দে কিশোরগঞ্জ নামে মহকুমার সৃষ্টি হয়। এর অধীনে থানার সংখ্যা ছিল মাত্র 3টি। যথা: নিকলী, বাজিতপুর ও কিশোরগঞ্জ। কিশোরগঞ্জ থানা প্রতিষ্ঠিত তারিখ উল্লেক নেই। ধারনা করা হয় একই তারিখে থানা ও মহকুমা নামের সৃষ্টি হয়েছিল। তারও বহু আগে অথ্যাৎকিশোরগঞ্জ মহকুমা সৃষ্টির প্রায় 15বছর পূর্বে নিকলী থানাকে 1845 খ্রিস্টাব্দে মহকুমা স্থাপনের জন্য একটি সরকারী প্রস্তাব ও রিপোর্ট পেশ করা হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে কি কারণে বাস্তবায়িত হয়নি তা জানা যায়নি। জেলা গেজেটিয়ারে এ তথ্য উল্লেখ আছে।
1880 খ্রিস্টাব্দে নিকলী থানা সদরে একটি মুন্সেফী আদালত ছিল।এটি পরবর্তীকালে হোসেনপুর থানার স্থানান্তরিত হয়। 1891 খ্রিস্টাব্দে হোসেনপুরের আদালতটি পুনরায় স্থানান্তরিত করে কিশোরগঞ্জ মহকুমা সদরে পুনস্থাপন করা হয়। 1880 খ্রিস্টাব্দে নিকলী থানা সদরে পোস্ট অফিস স্থাপিত হয়। অন্যদিকে, 1896 খ্রিস্টাব্দে নিকলী থানার পুলিশ ফাঁড়ি স্থানান্তরিত করে কটিয়াদীতে নিয়ে আসা হয়। প্রকাশ থাকে যে, কটিয়াদী সময়ে নিকলী থানার অন্তভূক্ত ছিল। অতপর: নিকলীতে পুনরায় থানা স্থাপিত হয় 1917 খ্রিস্টাব্দে। 1907 খ্রিস্টাব্দে নিকলী সদর পোস্ট অফিসে প্রাচীন টেলিগ্রাফ পদ্ধতি ও পরবর্তীকালে টেলিফোন চালু করা হয়। 1850 খ্রিস্টাব্দে নিকলী থানার প্রথম আদম শুমারীর লোক গণনার কাজ শুরু হয়। 1868 খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত জেলা গেজেটিয়ার নিকলী পরগনার বিভিন্ন জনপদের বিভিন্ন ধর্মগোত্র বর্নের জনগোষ্ঠীর লোক সংখ্যা পরগনার লোক আছে। নিকলী সদরে সর্বপ্রথম বেসরকারী পর্যায়ে ভারত চন্দ্র সাহা ডিসপেনসারী নামে একটি স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠান চালু হয়। বর্তমানে সরকারী পর্যায়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমম্পেক্স নামে একটি হাসপাতাল চালু রয়েছে।
4। ইউনিয়নসমূহের নাম: ১। নিকলী ২। দামপাড়া ৩। কারপাশা ৪। সিংপুর ৫। জারইতলা ৬। গুরই ৭। ছাতিরচর ইউনিয়ন।
৫। হাওড় সমৃদ্ধ কিশোরগঞ্জ জেলার কেন্দ্রস্থলে নিকলী উপজেলার অবস্থান। নিকলী থেকেই মূলত: হাওড়াঞ্চল শুরু হয়েছে। সে হিসেবে নিকলীকে হাওড়ের প্রবেশপথ বলা যায়। প্রবেশপথেই একেবারে হাওড়ের কুল ঘেঁসে নিকলী উপজেলা পরিষদের অবস্থান। এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দয এক কথায় অপরূপ। যা নিজের চোখে না দেখলে শুধু অনুমান করা যায় না। এখানে রয়েছে দিগন্ত বিস্তৃত ফসলের মাঠ। মাইলের পর মাইল
শুধুই সবুজ ফসলের মাঠ। আর সে সবুজ মাঠ বৈশাখে সোনালী বরণ ধারণ করে। ফসল তোলার পর যখন মাঠ বর্ষার পানিতে তলিয়ে যায় সে দৃশ্যটি আরো মনোমুগ্ধকর। তখন চারিদিকে শুধুই পানি আর পানি। নিকলী উপজেলা পরিষদের সামনে দাড়িয়ে পূর্বদিকে যতদূর দৃষ্টি যায় ততদূর পযন্ত অথৈ পানি। এ যেন কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতেরেই আরেকটি সংস্করণ। হাওড়ের বিশাল ঢউ এসে আছড়ে পড়ে প্রায় 5কিমি: দীর্ঘ নিকলী উপজেলা সদর প্রতিরক্ষণ দেয়ালে। প্রকৃতি এখানে তার অপরূপ সৌন্দয মেলে ধরেছে।
নৌকা বাইচ নিকলী উপজেলা একটি বার্ষিক ইতিহ্যবাহী বিনোদন। লক্ষ লক্ষ লোক বর্ষকালীন নৌকা বাইচ দেখা এবং প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য অপক্ষেমান থাকে। জাতীয়ভাবে সাতার প্রতিযোগিতা এবং সাতর তৈরীতেও নিকলীর ইতিহ্য অনেকদিনের। অতি সাধারণ জীবন যাপনে তুষ্ট সরল মনের মানুষ এবং দলমত নির্বিশেষে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিকলীর সবচেয়ে বড় ঐতিহ্য।
নামকরণ:
মোগল বাহিনী খাজা ওসমানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে এবং তাকে ধাবিত করতে এই এলাকায় এসে
পৌঁছায় এবং সেখানে ছাউনি ফেলে। তাদের অস্থায়ী আবাসস্থল স্থানীয় মানুষেরা জড়ো হলে দলের প্রধান সিপাহীদের বলেন উছলে নিকালো। এই ফার্সিয় শব্দ ভাষা উচ্চারনের বিবর্তন আর বিকৃতীতে নিকালো থেকে নিকলী হয়েছে বলে জনশ্রুতি হয়েছে। অন্যদিকে, নিকলীর সাবেক নাম আগর সুন্দর বলে নানা গ্রন্থে উল্লেখ হয়েছে। এদিকে নিকলী নিখলী নামের হুবহু শ্ব্দ উচ্চারণ ব্যবহার উল্লেখ রয়েছে বাংলা ভাষার প্রথম প্রাচীন চর্যাপদ নামক কাব্য গ্রন্থে। অনুরূপ প্রাচীন রসুল বিজয় কাব্য গ্রন্থে নিকলী›নিকলী›নিখলী শব্দ ব্যবহার উল্লেখ রয়েছে। অর্থাত জনপদ নামে নিকলী নামের সঠিক উতপত্তির কোন সন্ধান না পাওয়া গেলেও নিকলী এ শব্দ নামে দালিলি প্রমাণ পাওয়া যায়।
Planning and Implementation: Cabinet Division, A2I, BCC, DoICT and BASIS